নমস্কার বন্ধুরা,
আশা করি তোমরা সবাই ভালো আছো । আজকে আমরা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষায় আসা গুরুত্বপূর্ণ বাংলা gk প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করব । আমরা প্রথমে ইতিহাসের সিন্ধু/ হরপ্পা সভ্যতা নিয়ে বিস্তারিত বিষয় জেনে নিব যেগুলো আপকামিং বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য ভীষণ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এই পার্ট-1 থেকে তোমরা প্রতিটি চাকরি পরীক্ষায় অনেকগুলো প্রশ্ন কমন পাবে ।
Wbp gk question bengali-ইতিহাস ক্লাস – (সিন্ধু ও হরপ্পা সভ্যতা )
সিন্ধু /হরপ্পা সভ্যতার নামকরণ:-
- সিন্ধু সভ্যতা:- সিন্ধু নদীর উপত্যকায় গড়ে উঠেছিল তাই এর নাম সিন্ধু উপত্যকা
- হরপ্পা সভ্যতা:- প্রথম আবিষ্কৃত কেন্দ্র হরপ্পা তাই এই নামকরণ
- কাল সীমা:-
- হরপ্পা সভ্যতার কাল সীমা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও খ্রিস্টপূর্ব ৩২৫০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২৭৫০ অব্দকে ঊর্ধ্বতন কাল সীমা এবং ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দকে নিম্নতম কালসীমা বলে ধরা হয়েছে
- সিন্ধু সভ্যতা তাম্র প্রস্থর যুগের সভ্যতা -(Chalcolatic Age)
হরপ্পা ও সিন্ধু সভ্যতার আবিষ্কার :-
- ১৮৭৫ সালে ইংরেজ প্রত্নতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার ক্যানিংহাম হরপ্পা থেকে কতগুলো সীলমোহর পান,
- ১৯১২ সালে জে ফিল্ড আরও কতগুলি হরপ্পা সিলমোহর আবিষ্কার করেন,
- এর সূত্র ধরেই 1921 খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম পাঞ্জাবের মন্টগামারী জেলায় ইরাবতী বা রাভী নদীর তীরে স্যার জন্ মার্শাল ও দয়ারাম সাহানি হরপ্পা সভ্যতা আবিষ্কার করেন ।
- ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু নদের পশ্চিম তীরে সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলায় মহেঞ্জোদারো আবিষ্কৃত হয় ।
সিন্ধু সভ্যতার বিস্তার-
- সিন্ধু সভ্যতার বিস্তার ছিল বেলুচিস্থান থেকে সিন্ধু প্রদেশ পর্যন্ত প্রায় সমগ্র পাকিস্তান,, আধুনিক ভারতের গুজরাট, রাজস্থান, হরিয়ানা ও পাঞ্জাব রাজ্য,
সিন্ধু সভ্যতার স্রষ্টা-
সিন্ধু সভ্যতা কারা গঠন করেছিল এই নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া যায় , খনন কার্যের ফলে সিন্ধু উপত্যকায় যে সমস্ত নর কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে সেগুলির পরীক্ষা করে প্রধানত সিন্ধু সভ্যতার জনগোষ্ঠীর মানুষকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
- প্রোটো অস্ট্রালয়েড
- ভূমধ্যসাগরীয়
- অ্যালপাইন
- মঙ্গোলীয়
নগর পরিকল্পনা-
- সিন্ধু সভ্যতা ছিল নগর কেন্দ্রিক সভ্যতা, নগর গুলির মধ্যে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো উল্লেখযোগ্য,
- আয়তাকার নগর গুলি দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল,
- পশ্চিম ভাগে একটি উঁচু এলাকায় ছিল চারদিকে দেয়াল বেষ্টিত ইটের তৈরি দুর্গ, যেখানে থাকত সমাজের উচ্চ শ্রেণীর মানুষের আবাসস্থল প্রশাসনিক ও ধর্মীয় ভবনগুলি, 2.সাধারণ মানুষের জন্য নিচের শহরাঞ্চল বা উপ নগরী থাকত এই অংশ দাবার বোর্ডের মত ওয়ার্ডে বিভক্ত ছিল সমাধিক্ষেত্র গুলি সাধারণত শহরের বাইরে অবস্থান করত
- হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো দেখা যায় আগুনে পোড়ানো ইটের বাড়ি
- লোথাল ও কালি বঙ্গানে দেখা যায় রোদে পোড়ানো ইটের বাড়ি
প্রতিটি বাড়ির শৌচাগারের জল ও বৃষ্টির জল রাস্তার নিচ দিয়ে বড় নর্দমায় নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ছিল, নর্দমা গুলি পরিষ্কারের জন্য ইট দিয়ে তৈরি ঢাকা ম্যানহোল এর ব্যবস্থা ছিল, জনগণের ব্যবহারের জন্য রাস্তাতেও কূপ খনন করা হতো
তোমরা যদি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ কনস্টেবল এবং লেডি কনস্টেবল এর পূর্ববর্তী সমস্ত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র গুলোর PDF ডাউনলোড করতে চাও তাহলে নিচের দেওয়া ডাউনলোড নাউ বাটনে ক্লিক করুন-
সামাজিক জীবন-
সামাজিক জীবনের ক্ষেত্রে বৈদিক যুগের মত বর্ণ প্রথা চালু না থাকলেও চারটি ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল সেগুলি হল-
- প্রথম শ্রেণীতে থাকতো শাসক, পুরোহিত চিকিৎসক জ্যোতিষী
- দ্বিতীয় শ্রেণীতে থাকতো যোদ্ধা
- তৃতীয় শ্রেণীতে থাকতো ব্যবসায়ী শিল্পী কারিগর এবং
- চতুর্থ শ্রেণীতে থাকতো কৃষক তাতী জেলে মিস্ত্রি অর্থাৎ শ্রমজীবী সম্প্রদায়ের মানুষ।
এছাড়াও তাদের খাদ্যে ছিল গম, জব, তরি-তরকারি । সুতিবস্ত্র ছিল তাদের প্রধান বস্ত্র। পৃথিবীর প্রথম তুলা চাষ মহেঞ্জোদারোতে পাওয়া যায়। সিন্ধু সভ্যতার নারী-পুরুষ অলংকার পরতো । কন্ঠহার, চুল বাধার অলংকার আংটি, চুরি, প্রভৃতি থাকতো ।তারা মাটির তৈরি যেমন থালা, কলসি, বাটি ইত্যাদি ব্যবহার করত ।এইসব পাত্রে নানারকম আলপনা আঁকা থাকতো ।এখানে তামা, রূপো, ব্রঞ্চ ও চিনামাটি তৈরি জিনিসপত্র পাওয়া গেছে। ছুরি ,হাতির দাঁত অথবা হাড়ের তৈরি চিরুনি কাস্তে কুড়োল চার চৌক পাথর (ওজন মাপার ক্ষেত্রে) ব্যবহার করা হতো
তবে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় সিন্ধু জনগণ লেখাপড়া জানতো না, যার প্রমাণ লিপি সিন্ধু সভ্যতার লিপিকে ব্রেস্ট ফেটন ( Brestophodon) বলা হয়
হরপ্পা সভ্যতার জীবিকা-
সিন্ধু সভ্যতার নগরকেন্দ্রিক হলেও কৃষিকাজ ছিল তাদের প্রধান জীবিকা, তারা গম, জব, কার্পাস, সরিষা,তিল, মটর, খেজুর ইত্যাদি উৎপন্ন করতো ।রবিশস্য হিসেবে গম ও জবের চাষ হতো খারিফ শস্য হিসেবে তুলা তেল উৎপন্ন হতো। পশুপালনে তারা গরু ছাগল কুকুর মোষ ভেড়া ছিল প্রধান গৃহপালিত পশু ।তারা হাতিকেও পোষ মানাতো।
ব্যবসা বাণিজ্য-
বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য চলতো মিশর ব্যাবলিন পারস্য বাহারিন এর মধ্যে তবে সিন্ধু জনগণ মুদ্রার ব্যবহার জানতো না বিনিময় প্রথার মাধ্যমে কেনা বেচা হতো। ওজন এবং পরিমাপের জন্য কিউবিক প্রথার প্রচলন ছিল
ধর্মীয় জীবন-
সিন্ধু জনগণের মধ্যে মাতৃ পূজার প্রচলন ছিল তারা বাঘ হাতি গন্ডার মহিষ ও হরিণ এই পাঁচটি পশু দ্বারা পরিবৃত্ত এক ত্রিমুখ বিশিষ্ট ধ্যানমগ্ন এক জগামূতি দেখা যায় এবং মূর্তিটির মাথায় দুটি শিং আছে। অনুমান করা হয়েছে যে সম্ভবত ইনি হলেন পশুপতি মহাদেব কারণ হিন্দু ধারণায় শিব হলেন ত্রি মুখ পশুপতি ও যোগেশ্বর তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে কোন মন্দিরের নিদর্শন পাওয়া যায়নি।
সিন্ধু সভ্যতা পতনের কারণ-
বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মতে সিন্ধু সভ্যতা কতগুলো কারণবশত ধ্বংস হয়ে গিয়েছে সেগুলি হল-
- অনেকের মতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন অতিরিক্ত বৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি এই সভ্যতা ধ্বংসের কারণ।
- আবার অনেকে মনে করেন নদীর গতিপথের পরিবর্তনের ফলে মরুভূমি সৃষ্টির মতো পরিস্থিতি এই সভ্যতা পতনের কারণ।
- কেউ কেউ মনে করেন ভূমিকম্পের ফলে এই সভ্যতার পতন হয়েছে।
- আবার অনেকের মতে বিদেশী শত্রু অর্থাৎ আর্যদের আগমন এই সভ্যতা পতনের অন্যতম প্রধান কারণ।
সিন্ধু সভ্যতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানের নাম যেগুলো থেকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ কনস্টেবল পরীক্ষায় অনেক প্রশ্ন এসেছে। সেগুলি হল-
1.হরপ্পা
- দয়ারাম সাহানি 1921 খ্রিস্টাব্দে বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মন্ট গামারি জেলার ইরাবতী বা রাভী নদীর তীরে হরপ্পা আবিষ্কার করেন
- সিন্ধু সভ্যতা প্রথম আবিষ্কৃত স্থানটি হল হরপ্পা
- এখানে দুইটি শারিতে ছয়টি করে মোট 12 টি শস্যগারের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে
- একমাত্র হরপ্পাতেই কফিন সমাধির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে এবং নটরাজ মূর্তি পাওয়া গেছে।
2.মহেঞ্জোদারো
- রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান পাকিস্তানের লাহোরের লারকানা জেলায় সিন্ধু নদীর তীরে মহেঞ্জোদারো আবিষ্কার করেন
- মহেঞ্জোদারো কথার অর্থ মৃতের স্তুপ, এখানে বৃহত্তম স্নানগার পাওয়া গেছে ,
3.লোথাল
- লোথাল বিশ্বের প্রাচীনতম প্রত্যাশ্রয় বন্দর ,এটি আবিষ্কার করেন আর এস রাও , এখানে ধান চাষের নিদর্শন পাওয়া গেছে
এছাড়াও আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের নাম হচ্ছে – কালি বঙ্গান, চান হুদার এবং ঢোলাভিরা
আরো যদি বিস্তারিত জানতে চাও তাহলে নিচের দেওয়া ভিডিওটি দেখে নিতে পারো-
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ কনস্টেবল( WBP) লেডি কনস্টেবল ও সাব ইন্সপেক্টর, এছাড়াও আরো বিভিন্ন পরীক্ষায় উপযোগী যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন পরীক্ষায় আসে সেগুলোর নিচে একটু আলোচনা করছি। যেগুলো পরীক্ষার জন্য ভীষণ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ-
QUESTIONS:-
- বৃহত্তম স্নানগার কোথায় পাওয়া গেছে ?
- সিন্ধু সভ্যতার আদিবাসীদের কাছে কোন ধাতুর ব্যবহার অজানা ছিল?
- সিন্ধু সভ্যতা কে আবিষ্কার করেন?
- সিন্ধু সভ্যতার আদিবাসীরা কিসের ব্যবহার জানত না?
- সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংসের প্রধান কারণ কি?
- সিন্ধু সভ্যতা কোন নদীর তীরে গড়ে উঠেছে?
- ভারতের প্রাচীনতম বন্দর লোথাল এর আবিষ্কারক কে?
উপরের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এছাড়াও আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট দেওয়া হয়ে গিয়েছে তোমরা ভালো করে পড়লে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুব অনাআসে পরীক্ষা দিতে পারবে।